ভেঙে গেল গণফোরাম

অবশেষে ভেঙে গেল গণফোরাম। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও অধ্যাপক আবু সাইয়িদরা বর্ধিত সভা করে আগামী ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে বর্ধিত সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়াসহ চারজনকে বহিষ্কার করেন। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ড. কামাল হোসেনের কিছুটা স্মৃতিবিভ্রাট ঘটছে।

তবে এ বর্ধিত সভা ও বহিষ্কারকে ‘অবৈধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

দলের একাংশের বর্ধিত সভা প্রসঙ্গে গতকাল বিকালে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মোস্তফা মহসীন মন্টুদের বর্ধিত সভা ডাকার কোনো বৈধতা নেই।
গণফোরামের একাংশের বর্ধিত সভায় মূল মঞ্চে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, সাবেক নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, কেন্দ্রীয় নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, আসাদুজ্জামান, খান সিদ্দিকুর রহমান, আবদুর রায়হান, মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, ফজলুল হক সরকার, এম এ মতিন প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন। বর্ধিত সভার ব্যানারে লেখা ছিল ‘অর্থবহ পরিবর্তনের লক্ষ্যে চাই জাতীয় ঐক্য : বর্ধিত সভা : গণফোরাম’। বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আবু সাইয়িদ। এ সময় তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে ২৮৩ জন প্রতিনিধি সভায় অংশ নিয়েছেন। দলকে শক্তিশালী, গণমুখী এবং তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে আগামী ২৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় কাউন্সিল হবে।

কাউন্সিল সফল করতে এ সভায় সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুকে আহ্বায়ক করে জেলা নেতৃবৃন্দসহ ২০১ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিকালে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ওদের কোনো সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং বৈধতা নেই এ ধরনের মিটিং করার। এ মিটিংয়ের সঙ্গে আমাদের দল গণফোরামের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আমাদের দলের কোনো সিদ্ধান্ত না। যেহেতু এটি আমাদের দলের বিষয় না সেজন্য এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। গতকালের বর্ধিত সভায় বলা হয়েছে, ড. কামালকে কিছু লোক ভুল বোঝাচ্ছেন। এ বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ড. কামাল হোসেন বলেন, এসব কথা তারা বলার জন্য বলছেন। এটা তাদের একটা কৌশল। এসব বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না। এদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই
তারাই দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, এটা গণফোরামের বর্ধিত সভা নয়। তারা গণফোরাম থেকে চলে গিয়ে সভা করতে পারেন, কিন্তু গণফোরামকে ক্ষতি করে যাচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কেউ সভা ডাকতে পারেন না। তারা এ রকম সভা করে গর্হিত কাজ করেছেন। এ সভার সঙ্গে গণফোরামের সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা নিজেদের গণফোরাম থেকে সরিয়ে নিয়েছেন এ অগঠনতান্ত্রিক কাজটি করার মধ্য দিয়ে।

বর্ধিত সভা শেষে সাংবাদিকদের গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, আমরা ড. কামাল হোসেনকে বারবার বলেছি, কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং ডেকে সম্মেলনের তারিখটা নির্ধারণ করেন। আমরা চিঠি দিয়েও বলেছি। তারপর বলেন, না এ রকম কোনো কথা আমি বলিনি। আমার যেটা মনে হয়, হয়তো উনি কিছু জিনিস ভুলে যান। একটু স্মৃতিবিভ্রাট ঘটছে আর কি। তা ছাড়া ওদের একটা অশুভ প্রভাব আছে যে প্রভাবে তিনি অনেক কিছু গুলিয়ে ফেলেন।

মোস্তফা মহসীন মন্টু আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এখন আমরা আশা করি সংগঠন এক থাকবে। তার উপলব্ধি যে, সেই প্রথম লগ্নে আজ থেকে ২৮ বছর পূর্বে আমরা গণফোরামের যাত্রা করেছিলাম যাদের নিয়ে, সবাই একসঙ্গে থাকব। গত বছরের ৪ এপ্রিল পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের পর ঘোষিত কমিটিতে মন্টুকে বাদ দিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার পর থেকে গণফোরামে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দাঁড়ায় দুই গ্রুপ। রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেন অন্য পক্ষের নেতারা। একপর্যায়ে রেজা কিবরিয়া চারজনকে বহিষ্কার করেন। তারা হলেন কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল হাসিব চৌধুরী, খান সিদ্দিকুর রহমান, হেলাল উদ্দিন ও লতিফুর বারী হামিম। সুব্রত চৌধুরীরাও পাল্টা বহিষ্কার করেন সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির মহসীন রশিদ, আ ও ম শফিকউল্লাহ ও মোশতাক আহমেদকে। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্যে গত ৪ মার্চ গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। তিনি নিজে আহ্বায়ক হয়ে সাধারণ সম্পাদক করেন রেজা কিবরিয়াকে।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
error: ধন্যবাদ!